খুলনা, বাংলাদেশ | ৪ঠা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৮ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  জুলাই অভ্যুত্থানে হামলায় অভিযুক্ত ঢাবির ১২৮ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার
  দেশ বদলাতে একক নির্দেশে নয়, টিম হয়ে কাজ করতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা

যুবকরা পথ হারালে জাতি হেরে যাবে: জামায়াত আমির

গেজেট ডেস্ক

‘রাজনীতি বড়ই জটিল কাজ। এখানে মাথা ঠিক রেখে চলতে হবে। এখানে লোভ লালসা, ভয়, আতঙ্ক অনেক কিছু তোমাদের ছুড়ে দেওয়া হবে। এই জায়গায় যারা স্থির থাকতে পারবে, আশা করা যায়, তারা ভালো কিছু দিতে পারবে। আর এখানে যারা হেরে যাবে, তারা নিজেরা হেরে যাবে এবং জাতিকে হারিয়ে দেবে। আমরা দোয়া করি যুবকরা যেন কোনো অবস্থায় পথ না হারায়। তারা ভালো থাকলে আমরা ভালো থাকবো।’

রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির উদ্যোগে ‘রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্মানে ইফতার পার্টি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

জামায়াত আমির বলেন, বাংলাদেশে ‘ব’ ভূখণ্ডটি পরপর দুইবার আভিধানিক অর্থে স্বাধীনতা লাভ করার পরেও সত্যিকার অর্থে স্বাধীনতার স্বাদ এ জাতির ভোগ করার সুযোগ হয়নি। আমার হিসেবে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে, একটা জাতিকে উন্নত করার জন্য তিনটা কম্পোনেন্ট তো লাগবেই। যিনি পলিটিশিয়ান তিনি আগামী নির্বাচন নিয়ে চিন্তা করেন, আমি কীভাবে জিতবো? আর একজন স্টেইটম্যান। তিনি চিন্তা করেন, আমি আমার জাতিকে কীভাবে গড়বো। আমরা যেন ক্যাজুয়াল পলিটিক্স করে চলছি। যে সমস্যাটা আমার কাছে মনে হয়, এটি হচ্ছে নৈতিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়। রাজনীতি যদি নীতির রাজা হয়ে থাকে, তাহলে রাজনীতিবিদরা নিশ্চয়ই তার ককপিটের পাইলট। পাইলট যখন ককপিটে বসে। শারীরিক মানসিক সুস্থতার সঙ্গে তিনি তার কাজ চালাবেন। আশা করা যায়, যাত্রী সাধারণ আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় যথাসময়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। যদি পাইলটের সমস্যা থাকে, যদি তিনি নিজেই দুর্বৃত্ত, বিমান হাইজ্যাককারী হন, বিদ্রোহী হন অথবা মাথা তার বিগড়ে যায়, তাহলে তিনিসহ যাত্রী সাধারণের কারোরই কোনো নিরাপত্তা থাকে না। যেকোনো সময় বড় ধরনের যেকোনো বিপর্যয় ঘটতে পারে। যে সমস্যাটা আমার কাছে মনে হয়। আমি রাজনীতিবিদদেরকে মেইনলি অ্যাড্রেস করব। যেহেতু আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী। কোনো জায়গায় নিজেদেরকে অ্যাকাউন্টেবল মনে করি না। বিশেষ করে আমি যদি বিজয়ী হয়ে যাই, আমার জন্য সাত খুন মাফ। আর কে পায় এবং আমি আর আমার কোনো পতন বা পরিবর্তন দেখি না। আমার আশেপাশে যারা থাকে, তারা শুধু হাততালি দেয়। তারা বলে অসম্ভব কাজ আপনি সাধন করেছেন। আমি আর মানুষ থাকি না। রাজনীতিবিদেরা আমরা অতিমানব হয়ে যাই। এমন নেতৃত্ব শুধু রাজনৈতিক দলেরই নয়; একটা সভ্যতার পতন ঘটায়। এই তিনটা জায়গার মৌলিক চিন্তাগত পরিবর্তন।

তিনি বলেন, পরিবর্তন না আসা পর্যন্ত জাতি শক্ত করে মজবুত হয়ে দাঁড়াতে পারবে বলে আমি অন্তত বিশ্বাস করি না। এ জায়গাটায় অবশ্যই আমার কাজের জন্য, ডেফিনিটলি সমাজ এবং দেশের জন্য। স্বার্থকেই সবার ঊর্ধ্বে রেখে কিছু বিষয়ে তো আমাদের সবাইকে একমত হতেই হবে। ডিফারেন্স থাকবে, এটি বিউটি অব ডেমোক্রেসি। ডেমোক্রেসিতে একটা কথা আছে। লেটস এগ্রি টু ডিসেগ্রি। দ্বিমতের জন্য একমত হই। দ্বিমত পোষণ করা মতের পার্থক্য হোক, কিন্তু মতবিরোধ না হোক। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমরা পার্থক্যে থাকি না। আমরা মতবিরোধে জড়িয়ে পড়ি। যার কারণে এত বড় পরিবর্তনের পর যে শ্বাস ফেলতে পারছি এইটা শুকরিয়া আদায় করি। কিন্তু যেভাবে রাজনৈতিক দল এবং নেতৃবৃন্দের মধ্যে ঐক্যের পরিবেশ, দেশ গড়ার পরিবেশ, চিন্তার আদান প্রদান হওয়ার কথা ছিল, আমরা তা করতে পারিনি। আমি স্বীকার করছি, আমি লজ্জিত! আমরা এটা মেন্টেইন করতে পারছি না। যুবকদের প্রত্যাশা আমাদের কাছে অনেক ছিল। আমাদের প্রত্যাশার বাইরে অপ্রত্যাশিতভাবে বিশাল এক কাজ তারা করে দিয়েছে। তাদের প্রত্যাশা পূরণের দায়িত্ব তো আমাদের।

জামায়াত আমির সবাইকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, আসুন মুখের কথায় নয়, বুকের ভাষায় সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশকে ভালোবাসি। যদি বাংলাদেশকে ভালবাসা দিতে পারি, তাহলে অবশ্যই দেশ তার সঠিক পথ ফিরে পাবে। আমি একজন মহিলাকে খুব শ্রদ্ধা করি। তার নাম ভেলোরে। যিনি সিআরপি গড়ে তুলেছিলেন। তাকে সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিল, টু হুম ইউ ম্যারি? সে বলেছিল, বাংলাদেশ। তোমার হাজব্যান্ড কে? সে বলেছে, আমার হাজব্যান্ড বাংলাদেশ। এ থেকে বুঝার চেষ্টা করি।

আয়োজক দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট একেএম আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও দলের জেনারেল সেক্রেটারি নিজামুল হক নাঈমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন পারভেজ, আম জনতা পার্টির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান, ১২ দলের সমন্বয়ক এড. এহসানুল হুদা, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটার আহমদ আব্দুল কাইয়ুম, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা, মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এবি পার্টির এবিএম নাজমুল, গণ অধিকার পরিষদের মোহাম্মদ মশিউর রহমান, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মাসুম প্রমুখ।

এ ছাড়া ইফতার মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া, বাংলাদেশ ফেডারেশন সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহীনুর রহমান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ আলম, চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন প্রমুখ।

ইফতার মাহফিলে দেশজাতির কল্যাণ কামনা করে দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন বিজয়নগর বাইতুন নূর জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবুল হাসান কাসেমী।

খুলনা গেজেট/ টিএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!